October 14, 2025, 12:25 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি প্রবর্তন এবং দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠন—নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবে এসব কার্যকর নয় বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, বিদ্যমান এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থাকেই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এক জাতীয় সংলাপে এই আহ্বান জানায় সিপিডি। ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক সংলাপে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম আহমেদ।
গবেষণায় বলা হয়, দীর্ঘদিনের দলীয় আনুগত্য, পৃষ্ঠপোষকতা এবং ‘বিজয়ী সব পায়’ রাজনীতির সংস্কৃতিতে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা কার্যত প্রতীকী হয়ে থাকবে। এতে জবাবদিহি বা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বদলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা, প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
সিপিডি মনে করে, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ছাড়া শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে না। তাই উপরের কক্ষ গঠনের পরিবর্তে বিদ্যমান সংসদ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সংস্থাটি সংসদীয় ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কয়েকটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান হিসেবে বিরোধী দলীয় এমপিদের নিয়োগ;
রাজনৈতিক দলের তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা;
স্থানীয় সরকারকে আর্থিকভাবে আরও স্বনির্ভর করা;
স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো;
দলত্যাগ রোধে আইনি সংস্কার আনা।
এছাড়া সিপিডি মনে করে, শাসক দল যেন নির্বাহী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে, এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ও সাংবিধানিক পদে সরকারের নিয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। তবে এসব নিয়োগ সংসদীয় পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখা প্রয়োজন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, সংসদের আগে ও পরে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় পরামর্শ ও মূল্যায়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে আইনবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশন’-এর আদলে এই কমিশনের নাম হতে পারে ‘গণতন্ত্র, আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও আইনবিষয়ক সংসদীয় কমিশন’।
এই কমিশন সংবিধান, আইন ও প্রশাসনিক নীতিমালা শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং স্থানীয় সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে বিকশিত করার কাজ করবে বলে সিপিডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।